ট্রাম্পের ১০৪ শতাংশ পাল্টা শুল্কের জবাবে চীনের ৮৪ শতাংশ শুল্ক: টালমাটাল বিশ্ববাজারে মন্দার আশঙ্কা

 


ট্রাম্পের ১০৪ শতাংশ পাল্টা শুল্কের জবাবে চীনের ৮৪ শতাংশ শুল্ক: টালমাটাল বিশ্ববাজারে মন্দার আশঙ্কা

বিশ্ববাণিজ্যে উত্তেজনা চরমে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে বহু দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন, যার একটি অংশ কার্যকর হয় সেদিনই এবং বাকি অংশ ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী পূর্ণমাত্রায় বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনা করেছে।

চীনের জবাব: পাল্টা শুল্ক ৮৪ শতাংশে উন্নীত

ট্রাম্প প্রশাসনের সর্বশেষ পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় চীনও বসে থাকেনি। ৯ এপ্রিলের প্রথম প্রহরে জানা যায়, ট্রাম্প চীনা পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১০৪ শতাংশে উন্নীত করেছেন। এর জবাবে চীনও মার্কিন পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ৮৪ শতাংশে নিয়ে গেছে, যা আগে ছিল ৩৪ শতাংশ। চীনের দাবি, মার্কিন শুল্ক "নিপীড়নমূলক", এবং তারা আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ হিসেবেই এই শুল্ক আরোপ করেছে।

বাজারে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া

এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববাজারে ঝড় বইতে শুরু করে। এশিয়া ও ইউরোপের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতন দেখা যায়। প্যান-ইউরোপীয় স্টকস ৬০০ সূচক কমেছে ৩.৪ শতাংশ। খনিজ, স্বাস্থ্যসেবা, তেল ও গ্যাস খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—যার দাম যথাক্রমে ৫.৩%, ৩.৩% ও ৪.৬% হারে কমেছে।

একই সঙ্গে, ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে নেমে এসেছে, যা ২০২১ সালের পর সর্বনিম্ন। ডলারের দামও কমেছে, এবং বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে বৈশ্বিক মন্দার ঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে।

ওষুধ খাতও ঝুঁকিতে

ভারতের ওষুধশিল্পও বড় ধরনের ধাক্কার আশঙ্কায় আছে। এনডিটিভি জানায়, ট্রাম্প শিগগিরই ওষুধ খাতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি হওয়া ওষুধের পরিমাণ প্রায় ৮৭০ কোটি ডলার, যা মোট রপ্তানির ৩১ শতাংশ।

ট্রাম্প বলেন, "ওষুধে এমনভাবে শুল্ক বসানো হবে, যাতে কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রেই বিনিয়োগে আগ্রহী হয়।"

চীনের অবস্থান ও শ্বেতপত্র

চীন বলছে, তারা দ্বন্দ্ব মেটাতে আলোচনায় আগ্রহী, তবে বাণিজ্য ঘাটতি একটি কাঠামোগত সমস্যা। আজ প্রকাশিত শ্বেতপত্রে চীন যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ককে বৈশ্বিক বাণিজ্যব্যবস্থার জন্য হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে।

ইউরোপও প্রস্তুত প্রতিক্রিয়ার জন্য

রয়টার্স জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ট্রাম্পের শুল্কের জবাবে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রস্তাবিত পণ্যের তালিকায় আছে মোটরসাইকেল, মুরগি, ফলমূল, কাঠ, পোশাক ও ডেন্টাল ফ্লস। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশঙ্কা করছে, এই পদক্ষেপ ইউরো অঞ্চলে পূর্বাভাসের চেয়েও বেশি প্রভাব ফেলবে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অবস্থা

ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬২% কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা করছে। দেশটিতে দেউলিয়া হওয়ার আবেদন বাড়ছে, মানুষের ব্যয় কমছে, এবং মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়তে পারে। গোল্ডম্যান স্যাক্স জানিয়েছে, মন্দার আশঙ্কা ৩৫% থেকে বেড়ে এখন ৪৫%। জেপি মর্গানের পূর্বাভাস, বছর শেষে মূল্যস্ফীতি ৪.৪ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।

সোনার বাজারে উল্টো চিত্র

বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়লেও সোনার দাম বেড়েছে। আজ এক আউন্স সোনার দাম ৩ হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে—২.১২ শতাংশ বৃদ্ধিতে বেড়েছে ৬২.১২ ডলার। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময় এমন প্রবণতা স্বাভাবিক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া

এত সব প্রতিক্রিয়ার মাঝেও ট্রাম্প নির্ভার। তিনি বলেন, "সমস্যা সারাতে ওষুধ দিতে হয়, আমি সেই ওষুধ দিয়েছি। এখন কিছুটা অস্থিরতা স্বাভাবিক।" বিশ্বনেতাদের টেলিফোন কল তিনি বেশ উপভোগ করছেন বলেও জানান।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

Social bar